ISO সম্পর্কে ধারণা

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র | | NCTB BOOK

মি. রাইয়ান মানসম্মত পণ্য ও সেবা কেনার বিষয়ে খুবই আগ্রহী । বাজারে যেভাবে ভেজালের সয়লাব চলছে, খাবারে যেভাবে নানান অস্বাস্থ্যকর রাসায়নিক সামগ্রী মেশানো হচ্ছে, মুখে মিষ্টি কথা বলে সেবা প্রদানে যেভাবে ঠকানো হচ্ছে, চোখ ধাঁধানো বিজ্ঞাপন দিলেও কথা ও কাজে যখন হর-হামেশা অমিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে তখন মি. রাইয়ান কোথায় ভালো পণ্য ও সেবা পাবেন সে বিষয়ে সবসময়ই সতর্ক থাকেন। প্রতিষ্ঠানের মান যাচাই করতে চেষ্টা করেন। আর এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান ও পণ্যমানের যথার্থতার সনদ প্রদানের বিষয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যে কাজ করে এটাও তার জানা । ISO এমনই একটা প্রতিষ্ঠান।

একটা প্রতিষ্ঠান কতটা মানসম্মত পণ্য ও সেবা সরবরাহ করে এবং তাদের ব্যবস্থাপনার মান কেমন এ বিষয়ে সনদ প্রদানকারী একটা আস্তর্জাতিক মান প্রতিষ্ঠানই হলো ISO (International Standard Organization, যার পরিবর্তিত নাম International Organization for Standardization)। ISO সর্বপ্রথম সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৭ সালে ISO ৯০০০ নামে একটা মান নির্দিষ্ট করে তা অর্জনের যোগ্যতা ও গুণাবলি নির্দিষ্ট করে সংশ্লিষ্ট দলিলাদি প্রস্তুত ও প্রকাশ করা হয়। এ সময় থেকেই যারা এই মান অর্জন ও বজায় রাখতে সক্ষম তাদের একটা সময়কাল পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে এই মান সনদ দেয়ার কাজ শুরু হয়। ইউরোপ, জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান এই মান সনদ লাভে আগ্রহ প্রকাশ করায় দ্রুত তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশের অনেক প্রতিষ্ঠানও ইতোমধ্যে এ সনদ লাভ করেছে। পরবর্তী সময়ে আরও কয়েকটি ক্যাটাগরিতে মান নির্দিষ্ট করে ৯০০১, ৯০০২, ৯০০৩, ৯০০৪ নামে মান সনদসহ বিভিন্ন মানসনদ চালু করা হয়েছে। ইদানিং ২০১৪ নামে আরেকটি মান সনদ চালু হয়েছে। এ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা নিম্নে প্রদত্ত হলোঃ

১. ISO 9000 মান সনদ: ISO 9000 হলো একসেট মানদণ্ড, যার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানটি পণ্য বা সেবার আন্ত জাতিক মান নিশ্চিত করে। এটি মান কর্মসূচির একটি সনদ, যা এর বিশেষজ্ঞরা প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কার্যক্রম পরীক্ষার পর প্রদান করেন। এ সনদের জন্য প্রতিষ্ঠানকে কতকগুলো প্রয়োজনীয় শর্ত মেনে চলতে হয়। কোনো প্রতিষ্ঠান ISO 9000 হিসেবে তালিকাভুক্ত হলে ক্রেতারা এর মান সম্পর্কে নিশ্চিত ধারণা অর্জন করে । ISO 9000 উৎপাদককে সব সময় ক্রেতার আকাঙ্ক্ষা পূরণ করার জন্য পণ্যমান নিশ্চিত করতে হয় । ISO 9000 প্রকৃতপক্ষে ৫টি সনদ দ্বারা গঠিত। এগুলো হলো- ISO 9000, ISO 9001, ISO 9002, ISO 9003, এবং ISO 9004 ।

  • ISO 9000 হচ্ছে মানসম্পর্কিত একটা সামগ্রিক দলিল (Overview documents) যা অপরাপর মানদণ্ড নির্বাচনের নির্দেশনা প্রদান করে ।
  • ISO 9001 এমন একটি মানদণ্ড যা মান সংক্রান্ত ২০টি দিকের উপর দৃষ্টিপাত করে । এর অন্যতম হলো- ডিজাইন, উৎপাদন, স্থাপন এবং সেবামান। এর সাথে যে বিষয়গুলো যুক্ত থাকে তা হলো- ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব, মান ব্যবস্থার দলিলপত্র, ক্রয়, পণ্য ডিজাইন, পরিদর্শন, প্রশিক্ষণ এবং সংশোধনমূ কার্যক্রম।
  • ISO 9002 মানদণ্ড মূলত ISO 9001 এর মতই। যে সকল কোম্পানি ডিজাইন কাজের সাথে যুক্ত বা ক্রেতাদের ডিজাইন সংক্রান্ত সেবা প্রদান করে সে সব কোম্পানির জন্য এই মানদণ্ড প্রযোজ্য ।
  • ISO 9003 পরিধির দিক দিয়ে খুবই সীমিত এবং এটি শুধু উৎপাদন প্রক্রিয়ার উপর মনোযোগ দেয়। 
  • ISO 9004 অন্যান্য মানদণ্ড ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকে।

২. ISO 14000: ISO 14000 একটি পরিবেশ বিষয়ক ব্যবস্থাপনা সিস্টেম। ১৯৯৬ সালে International organization for standardization একসেট নতুন মানদণ্ড প্রবর্তন করে, যার নাম ISO 14000 ।  ISO 14000 পরিবেশ সম্পর্কিত দায়িত্বের শর্তাবলির উপর ভিত্তি করে একটি প্রতিষ্ঠানের কার্যসম্পাদন (Performance) নির্ধারণ করে। প্রাথমিকভাবে, ISO 14000 একটি স্বেচ্ছামূলক দিকনির্দেশনা এবং সনদপত্র কর্মসূচি হিসেবে শুরু করা হয়। এ সনদপত্রের মানদণ্ড ৪টি প্রধান দিক চিহ্নিত করে। এগুলো হলো-

  • পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা সিস্টেম (Environmental management system): উৎপাদনের ক্ষেত্রে আউটপুটের মাধ্যমে (বর্জ্য, তরল ময়লা) পরিবেশ দূষণের সম্ভাবনা থাকে। প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই এই দূষণ নিয়ন্ত্রণেরজন্য যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। 
  • পরিবেশগত কার্যসম্পাদন মূল্যায়ন (Environment performance evaluation) : প্রতিষ্ঠানের কাজের ফলে পরিবেশের উপর কিরূপ প্রভাব পড়ছে তা মূল্যায়নের সঠিক ও সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা থাকতে হবে।
  • পরিবেশগত মোড়ক (Environmental labeling): প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদিত পণ্যের মোড়ক প্রাকৃতিক পরিবেশের কোনো ক্ষতি করছে না তা অবশ্যই দেখতে হবে।
  • জীবন চক্র নির্ধারণ (Life cycle assessment): এক্ষেত্রে পণ্যটি পরিবেশের উপর স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে তী প্রভাব ফেলছে তা মূল্যায়ন করা হয়। পণ্যটি উৎপাদনকালে, ব্যবহারকালে বা ব্যবহার শেষ হওয়ার পর পরিবেশকে ক্ষতি করছে কি না তা পরীক্ষা করা হয়ে থাকে ।
Content added By
Promotion